প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ প্রকৃতির আশ্চর্য খাবার স্পিরুলিনা
প্রোটিন, ভিটামিন, আয়রন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ প্রকৃতির আশ্চর্য খাবার
স্পিরুলিনা। অতি ক্ষুদ্র নীলাভ সবুজ উদ্ভিদ এই স্পিরুলিনা সাধারণতঃ পানিতে
জন্মে। সামুদ্রিক শৈবাল নামেই এর বেশি পরিচিতি। বর্তমানে বাংলাদেশে গ্রীণ
হাউজে এর বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। অণুবিক্ষণ যন্ত্র
ছাড়া এই শৈবালকে খালি চোখে দেখা যায় না। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন,
ভিটামিন, লৌহ ও একাধিক খণিজ পদার্থ। সাধারণ খাদ্য হিসেবে তো বটেই নানা রোগ
নিরাময়ে মুল্যবান ভেষজ হিসেবে দেশে-বিদেশে স্পিরুলিনার প্রচুর চাহিদা
রয়েছে।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের একজন বিশেষজ্ঞ জানান, স্পিরুলিনার
গুণাগুণ অনেক। বিশেষ করে প্রচুর ভিটামিন, লৌহ ও নীলাভ সবুজ রং থাকার কারণে
স্পিরুলিনায় রয়েছে নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধের উপাদান। স্বাদ ও পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়াহীন স্পিরুলিনা নিয়মিত সেবন করলে আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা
পূরণ করে পুষ্টিহীনতা, রক্তশূন্যতা, রাতকানা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ,
আলসার, বাত, হেপাটাইটিস ও ক্লান্তি দূর হবে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ লোক আর্সেনিক জনিত
সমস্যায় ভুগছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, দেশের ৬৪টি জেলার টিউবওয়েলের
পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
বিভিন্ন প্রতিবেদনে এ সমস্যার ভয়াবহতার পাঁচ কোটি লোক আর্সেনিকযুক্ত পানি
পান করায় তাদের স্বাস্থ্য হুমকীর সম্মূখীন বলে বিশ্ব ব্যাংকের এক সমীক্ষায়
দেখা গেছে। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আর্সেনিক সমস্যা চিহ্নিত করা
এবং আর্সেনিকযুক্ত টিউবওয়েরে পানি পান না করা সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা
হচ্ছে। কিন্তু আর্সেনিক রোগে আক্রান্ত হলে কি করণীয় সে সম্পর্কে তেমন কোনো
কাজ এখন পর্যন্ত হয়নি। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন
ডাক্তার এবং বিসিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীরা ৬০ জন আর্সেনিকোসিস রোগীর উপর
স্পিরুলিনা নিয়ে গবেষণা চালান। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন ১০ গ্রাম
করে স্পিরুলিনা খাওয়ালে প্রায় ৪ মাস পর রোগী সম্পূর্ণরূপে সুস্থ্য হয়ে উঠে।
যেহেতু এখন পর্যন্ত আর্সেনিক রোগের কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি সে ক্ষেত্রে
স্পিরুলিনা সেবন করে আর্সেনিকমুক্ত থাকাটা সত্যিই আমাদের জন্য বিরল
সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
বর্তমানে স্পিরুলিনা ট্যাবলেট বা রুটি, আলু ভর্তা, নুডলস, শরবত, হালুয়া
ইত্যাদিতে স্পিরুলিনা মিশিয়ে নানা জাতীয় স্পিরুলিনা সমৃদ্ধ খাবার তৈরি করে
বাজারজাত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খাবার তৈরি করার সময় অবশ্যই পরিমাণ
অনুযায়ী স্পিরুলিনা মেশাতে হবে।
কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অন্য কোনো জরুরী অবস্থায় শ্বেতসার জাতীয় খাদ্যকে
আমিষ, ভিটামিন ও লৌহ দ্বারা সমৃদ্ধ করার জন্য স্পিরুলিনা ব্যবহার করা যেতে
পারে। বর্তমানে স্পিরুলিনা যুক্ত পাউরুটি, স্পিরুলিনা পানীয় বাজারে পাওয়া
যাচ্ছে। বেকারী সামগ্রী- বিস্কুট, চকলেট ইত্যাদির সংগেও স্পিরুলিনা মেশানো
যেতে পারে। এ ছাড়া প্রসাধনী সামগ্রী হিসেবেও স্পিরুলিনা ব্যবহার করা যেতে
পারে যা ব্রনের দাগ দূর করে ও ত্বকের সজীবতা বাড়াতে ভুমিকা রাখে।
No comments:
Post a Comment